ক্রাইমজোন হিসেবে পরিচিত সিদ্ধিরগঞ্জে মাদক সেবীদের উৎপাত আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা দিয়েছে সচেতনতার অভাব। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় মাদক সেবন কারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঘরে যেমন আতংক সৃষ্টি করে পরিবারের সদস্যদের ভিতির মধ্যে রেখেছে তেমনি এলাকায় অরাজকতা করছে। ইভটিজিং সহ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বেড়েছে মাদক সেবনকারীদের কারণে। যার ফলে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের দূরাত্বে মাদক সেবনকারীরাও অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর পরই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মোড়ে মাদক সেবীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় লোকজন হামলা-উৎপাত ও লোক লজ্জায় ভয়ে এসব মাদকসেবীদেরকে কিছু বলেন না ও প্রতিবাদ করতে চান না। গোপনে ও প্রকাশে হরদম চলছে মাদক সেবন। যার মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন সহ একাধিক মাদকদ্রব্য। তবে ইয়াবা ও গাঁজা সেবিদের সংখ্যা চোখে পড়ার মত। পিছিয়ে নেই মদ ও হেরোইন সেবীরাও। এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া যুবকরা রয়েছে মাদকসেবীদের তালিকায়। সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডিজে পার্টির আড়ালেও রাতভর চলে মাদক সেবন। আর ডান্স ক্লাবগুলোতে মাদকের রমরমা আসর বসে। মাদকসেবীদের এমন অসামাজিক কার্যকলাপে সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সানারপাড়, মৌচাক, মাদানী নগর, নিমাইকাশারী, মুক্তিনগর, শিমরাইল, বাঘমারা, মিজমিজি, কান্দাপাড়া, কলাবাগান, আদমজীনগর, কদমতলী, নয়াআটি, এসও, বার্মাস্টান্ড ডিপো সংলগ্ন এলাকা, শিমুলপাড়া, আইলপাড়া, বাড়ৈইপাড়া, গোদনাইল বাগপাড়া, ধনকুন্ডা, জালকুড়ি, আরামবাগ, জিএমসি, তাতখানা, ভুইয়াপাড়া, শান্তিনগর, লক্ষীনারায়ণ, রসুলবাগ, পানিরকল, পাঠানটুলী, নতুন আইলপাড়া, এনায়েতনগর সহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিতে গলিতে প্রতি রাতে সেখানে মাদক সেবীদের আড্ডা বসে। আড্ডা শেষে চলে মাতলামী। একেক দিন আড্ডার স্থান পরিবর্তন হয়। এদের প্রভাবে এলাকার যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ নির্দিষ্ট একাধিক স্থানে পাওয়া যায় মাদকদ্রব্য । তবে ব্যবসায়ীরা পরিচিত মাদকসেবী ছাড়া অপরিচিত কারো কাছে মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন না। মাদক সেবীদের অনেকেই শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক লোকজন। মাদক সেবনকারী শুধু পুরুষই নয়, নারীরাও মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। স্থানীয়রা জানান, ধূমপান, ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করতে দেখা যায় তাদের।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত মোঃ সাইফুল ইসলাম প্রথমা টিভিকে বলেন, ‘মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীদের নির্মূল করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমাদের নিজেস্ব সোর্স ও সাধারণ লোকজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার জন্যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’ সেই সাথে মিডিয়া কর্মীদেরও আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের পরিদর্শক ওবায়দুল কবীর প্রথমা টিভিকে বলেন, ‘আমরা মাদক নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় আছি। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানব কল্যাণ পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মান্নান ভূঁইয়া বলেন, মাদক গ্রহণ করার ফলে দেহের ক্ষতি তো হচ্ছেই, মানসিক ক্ষতিও হয়। মাদক গ্রহনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যুবসমাজ কৌতূহলে অথবা বন্ধুদের চাপে মাদকাসক্ত হচ্ছেন। মাদকাসক্তকে না বলা শিখতে হবে। যে মাদক গ্রহণ করতে বলে সে প্রকৃত বন্ধু নয়। জীবনকে ভালোবাসতে হবে, মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। তাই সচেতনতার বিকল্প নেই। আর এ বিষয়ে প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।