1. themescell@gmail.com : admi2018 :
২১ নভেম্বর, ২০২৪, দুপুর ১:৫৫
সংবাদ শিরোনাম :

সতীত্ব হারালেই নারীকে জীবন্ত কবর!
কানিছ সুলতানা কেয়া

M A Mannan
  • আপডেট : জুলাই, ২৫, ২০২১, ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ
  • 417 বার দেখা হয়েছে

জীবন্ত সমাধি দেওয়ার প্রচলন ছিল বিভিন্ন যুগে। প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য সব জায়গাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কঠোর শাস্তির এক অন্যতম রূপ হিসেবেই বিবেচনা করা হয় জীবন্ত সমাধি দেওয়াকে। মানববলিও এর মধ্যেই পড়ে।

জীবন্ত সমাধি দেওয়ার প্রচলন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় রোমে।

এই পদ্ধতিতে শাস্তি দেওয়ার রীতিকে তারা বলত ‘ইমিউরেমেন্ট’। সে সময় দেবী ভেস্তার সেবায় যেসব নারীরা থাকতেন; তারা ছিলেন কুমারী। সারাজীবন তাদের কুমারীই থাকতে হত, দেবীর সেবা করার জন্য।

jagonews24

এই কুমারী সন্ন্যাসিনীদেরকেই বলা হত ‘ভেস্টাল ভার্জিন’। তবে কেউ যদি সতীত্ব হারাতেন; তাহলে তিনি যে শুধু দেবীর সেবা করা থেকেই বাদ পরতেন, তা কিন্তু নয়! তার জন্য ছিলো কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। ‘ইমিউরেমেন্ট’ এর মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেওয়া হত।

এই সন্ন্যাসিনীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য ছিল ভেস্তার মন্দিরে চিরস্থায়ী আগুনকে রক্ষা করা। যে আগুন শহরটির ভেস্তার সুরক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতো। এই পবিত্র শিখা নিভে যাওয়া ভয়াবহ শুভ কাজ হিসেবে বিবেচিত হত। ভেস্টাল ভার্জিনদের রোমের ভালোমন্দ দেখারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

এসবের জন্য জাঁকজমকপূর্ণ সুযোগ-সুবিধাও পেতেন কুমারীরা। তবে কেউ নিজের কর্তব্যের অবহেলা করলে ভয়াবহ শাস্তিও পেতেন। নিজের সতীত্ব ব্রত ভাঙা একজন ভেস্তা সন্ন্যাসিনীর জন্য ছিল গুরুতর অপরাধ। এ কারণে সতীত্বের ব্রত রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতেন তারা।

jagonews24

সে কারণেই যদি কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করতেন, তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হত জীবন দিয়ে। সতীত্ব ভাঙা ভেস্টাল ভার্জিনদের আমৃত্যু একস্থানে আটকে রাখা হত।

এতে শাস্তিপ্রাপ্ত নারী আমৃত্যু একটি ছোট্ট বাক্সে বন্দি থাকতেন। পানি ও খাবারের অভাবে মারা যেতেন তারা।

আবার জীবিত কবর দেওয়ার কারণে অনেকে শ্বাসকষ্টে মারা যেতেন। রোমে দেবীর সেবায় নিয়োজিত কোনো নারী সতীত্ব হারালেই কেবল এই শাস্তি দেওয়ার রীতি ছিল। তবে ‘ইমিউরেমেন্ট’ বা জীবন্ত সমাধি দেওয়ার রীতি ছিল অনেক দেশেই। কোথাও মৃত্যুর এই ভয়ঙ্কর রূপ ব্যবহার করত মানববলি দিতে, কোথাও বা অপরাধীর জন্য।

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই ‘ইমিউরেমেন্ট’এর উদাহরণ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ইমিউরেমেন্টের শিকার লোকদের বিষয়েও অনেক লোককাহিনী আছে। অনেক সময়, ‘ইমিউরেমেন্ট’র শিকার লোকদের কঙ্কালগুলো প্রাচীরের আড়ালে সিলযুক্ত অবস্থায়ও পাওয়া গিয়েছে।

‘ইমিউর’ শব্দটি যথাক্রমে ল্যাটিন শব্দ ‘ইন’ ও ‘মুরুস’ থেকে এসেছে। ‘ইন’ অর্থ ‘ভেতরে’ আর ‘মুরুস’ অর্থ ‘দেওয়ালে’। এই শব্দটির উৎপত্তি মধ্যযুগীয় লাতিন শব্দ ‘ইমিউরারে’ থেকে, যার আক্ষরিক অর্থ ‘দেয়ালের মধ্যে বদ্ধ হয়ে যাওয়া’। এই শব্দের ল্যাটিন উৎস বিবেচনা করে গবেষকদের ধারণা, প্রাচীন রোমেই হয়তো ‘ইমিউরেমেন্ট’র যাত্রা শুরু হয়েছিল।

রোমান লেখক প্লিনি দ্য ইয়ুঙ্গারের এক চিঠিতে এমন শাস্তি প্রাপ্ত একজন ভেস্টাল ভার্জিনের শেষ পরিণতির বর্ণনা পাওয়া যায়। সম্রাট ডোমিশিয়ান কর্তৃক কর্নেলিয়া নামের একজন ভেস্টাল ভার্জিনের ‘ইমিউরেমেন্ট’ সম্পর্কে নিজের এক বন্ধুকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন প্লিনি দ্য ইয়ুঙ্গার।

jagonews24

এ ছাড়াও ১৯ শতকে গ্রীক ও রোমানদের একটি অভিধানে অ্যান্থন স্মিথের লেখাতেও ভেস্টাল ভার্জিনদের এমন মৃত্যুদণ্ডের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই অভিধানটি একটি স্কুলের লাইব্রেরিতে পাওয়া গিয়েছিল। অ্যান্থন স্মিথের লেখা থেকে জানা যায়, ভেস্টাল ভার্জিনের এই শাস্তির জন্য আয়োজন করা হত জাঁকজমক অনুষ্ঠান। যার উদ্দেশ্য ছিল সারা দেশের মানুষকে ভেস্টাল ভার্জিনের অপরাধের ভয়াবহ শাস্তির কথা জানানো।

অন্যরা সতর্ক হলেও অনেকে অসতর্ক হয়ে ভুল করে ফেলতেন।

প্রাচীন রোম থেকে মঙ্গোলদের মধ্যেও ছড়িয়েছিল এই রীতি। তবে তারা দাস-দাসীদের জীবন্ত সমাধি দিত। কোনো মনিব মারা গেলে তার দাস কিংবা দাসীকে মনিবের সঙ্গে সমাধি দেওয়ার প্রচলন ছিল। অনেক সময় দাস বা দাসীকে সমাধি দেওয়ার আগেই হত্যা করা হত।

আবার অনেক সময় মনিবের সমাধিতে জীবন্ত অবস্থায় সমাধি দেওয়া হত। তারা বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুর পরও যেন মনিবের সেবা করতে পারে দাস-দাসী।

মরক্কোর বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতার ‘রিহলা’তেও এমন উদাহরণ পাওয়া যায়। ‘রিহলা’ ইংরেজিতে ‘ট্র্যাভেলস অব ইবনে বতুতা’ নামেও পরিচিত।

১৩২৫ থেকে ১৩৫৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ইবনে বতুতা মোট ১ লাখ ২০ হজার কিলোমিটার (৭৫ হাজার মাইল) ভ্রমণ করেছিলেন। সে সময়কার প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশ ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। এমনকি দূর প্রাচ্যের চীন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন।

jagonews24

ইবনে বতুতার চীন সফরের সময় সেখানে মঙ্গোল ইউয়ান রাজবংশের শাসন প্রচলন ছিল।

তিনি সেখানকার মানব বলি সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। ইবনে বতুতার বর্ণনা মতে, মৃত একজন খানকে (শাসক) চারজন জীবন্ত দাসী এবং তার ছয়টি প্রিয় মামলুকসহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল। যদিও ইবনে বতুতা এই শাসকের নাম উল্লেখ করেননি। যেহেতু চীন সম্পর্কে তার বর্ণনাটি যথেষ্ট অস্পষ্ট তাই ঐতিহাসিকরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, ইবনে বতুতা সত্যিই কি চীন ভ্রমণ করেছিলেন!

ভারতবর্ষেও কিন্তু এই ‘ইমিউরেমেন্ট’এর উদাহরণ পাওয়া যায়। যেটাকে ইতিহাস জানে সতীদাহ প্রথা নামেই। স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যেতে হত স্ত্রীদের। সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের স্বামী নারা গেলে একই চিতায় তাদের তুলে দেওয়া হত। ইনকা সভ্যতায় কুমারী মেয়েদের এভাবে বলি দেওয়ার ঘটনা বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছে।

জীবিত অবস্থায় তাদের নির্জন গুহায় একা রেখে আসা হত। দেবতাকে উতসর্গ করা হয় মেয়েটিকে। খাবার, পানির অভাবে কিছুদিনের মধ্যে সেখানে মারা যেত উতসর্গকৃত এই কুমারীরা। বিংশ শতাব্দীতে এসে চিলি এবং আর্জেন্টিনার সীমান্তে যেসব অঞ্চল একসময় ইনকা সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল সেখানে শিশুদের মমি পাওয়া যায়। যেগুলোকে ‘লুল্লাইলাকোর শিশু’ বা ‘লুল্লাইলাকোর মমি’ও বলা হয়।

jagonews24

সেখানে তিনটি মমি আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৯ সালে। যাদের নাম দেওয়া হয় লুল্লাইলাকোর মেইডেন, লুল্লাইলাকোর বয় এবং লাইটেনিং গার্ল। মমিগুলোর জৈব রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, তাদের তাপস্যের উদ্দেশ্যে তাদের জীবন্ত সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

এই মমিটির রাসায়নিক পরীক্ষা থেকে জানা যায়, লুল্লাইলাকো মেইডেনের মৃত্যুর সময় বয়স ছিল ১৩ বছর।

জীবিত থাকতে সে ভুট্টা ও পশুর প্রোটিন জাতীয় অভিজাত খাবার গ্রহণ করছিল। একই সময়ে, তার কোকা এবং চিচা খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল, এটি ভেজানো ভুট্টা থেকে তৈরি অ্যালকোহল। গবেষকদের ধারণা, এই অ্যালকোহল লুল্লাইলাকো মেইডেনকে উন্মাদ করে দিত। এমনকি তার বলিদানের দিন তাকে অজ্ঞান করে দেওয়া হয়েছিল।

তবে এই ‘লুল্লাইলাকোর শিশু’ বা ‘লুল্লাইলাকোর মমিদের’ ব্যাপার ইবনে বতুতার বর্ণনার সঙ্গে একেবারেই মেলে না। কেননা শাসকদের সঙ্গে দাস-দাসীদের মনিবের সঙ্গে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হলেও ইনকা সভ্যতায় মেয়েদের এমন সমাধি দেওয়ার উদ্দেশ্য বলিদান ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবেই যুগ যুগ ধরে ইতিহাসে নারীর জীবন্ত সমাধির উল্লেখ আছে।

সূত্র: অ্যানসেইন্ট অরিজিন

এই খবরটি আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করুন
No Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো খবর

ব্যাচ ৯৭ নারায়ণগঞ্জের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন খেলোয়ারদের অভিনন্দন

নারায়ণগঞ্জ জেলা তথ্য অফিস পরিদর্শনে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজামূল কবীর 

মার্জিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্লাস পার্টি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ওয়়ার্ড আওয়ামী লীগের মতবিনিময়
আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ওয়়ার্ড আওয়ামী লীগের মতবিনিময়

আকিফের স্মরণে খেলাফত মজলিসের দোআ মাহফিল অনুষ্ঠিত

সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মাদক সেবীদের উৎপাত: আতঙ্কিত অভিভাবক মহল

ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন বরণে সাজবেন যেভাবে

সাবেক বিচারপতির মেয়ে ও নায়িকার মা ভিক্ষা করছেন ঢাকার পথে পথে

মানব কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে গরীবদের চিকিৎসা সহায়তা বিতরণ

ঢাকা কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দোশে ছেরে আসা ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলীত হয়

পেট্রোল ও অকটেনে ভেজাল তেলের বিরুদ্ধে গোদনাইল পদ্মা ডিপো ট্যাংকলরী শ্রমিকদের বিক্ষোভ

বগুড়া জেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

মাস্ক এখন যে কারণে জরুরি
শেখ আনোয়ার

বন্ধ করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম

বসার জায়গা নেই নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসে: ভবন নির্মাণের দাবীতে দলিল লিখকরা

রোকেয়া পদক পেলেন পাঁচ বিশিষ্ট নারী

করোনার উৎস ভারত-বাংলাদেশ, দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের

বোয়েসেলের মাধ্যমে এক বছরে ১২ হাজার দক্ষ কর্মী নেবে জর্ডান

বাংলাদেশে মূর্তি সংস্কৃতির স্থান হবে না – ছাত্র মজলিস সভাপতি

নারায়ণগঞ্জে উদ্যোক্তা উৎসব অনুষ্ঠিত

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ প্রথমা টিভি
Theme Developer Hostcell
Translate »