নারী সমাজ বরাবরই অবহেলিত। উচ্চতর ডিগ্রি নিলেও অধিকাংশ নারীর ঠিকানা যেন রান্নাঘর। পুরুষপ্রধান এ সমাজে ঘর থেকে বের হতে হলে বাবা, ভাই কিংবা স্বামীর অনুমতি নিতে হবে, তারপরও আছে কত বাধা-নিষেধ। দীপ্ত পদচারণায় এসব প্রতিবন্ধকতা নারীরা এখন জয় করতে শিখেছেন। এখন নারীরা পড়াশোনা করছেন, চাকরি করছেন- এমনকি স্বাধীন উদ্যোক্তাও হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, যেসব নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করছেন, তারা ভালো করছেন।
নারী উদ্যোক্তা সায়মা শাহিদা ইসলাম বলেন, নারী ও পুরুষের সমতা ছাড়া দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে সমাজে নারীদের অবস্থান সুসংহত হয় না। এ জন্য নারীদের আত্মসম্মানবোধ বাড়াতে হবে। ২০২০ সালে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে পরিবারের ওপর নেমে আসে অর্থনৈতিক সংকট। তবে করোনার এ মহামারির মধ্যে নারীকে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস ও প্রত্যয়ও দেখেছি। টিকে থাকার লড়াইয়ে সফলতার সঙ্গেই অনেক নারী হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। কিন্তু সবাই শুধু সফলতার গল্পটাই শোনে। এর পেছনের কষ্টটা কিন্তু কেউ দেখে না।
আমরা এমন অনেক নারীকে দেখেছি, যে কিনা পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন করোনার সময়ে, অথচ তাদের ছিল না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, ছিল না কোনো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। সেই জায়গা থেকে একজন নারীর ঘুরে দাঁড়ানোটা মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু তারা তা করে দেখিয়েছেন। তাদের ছিল না কোনো পুঁজি, ছিল না কোনো বিজনেস প্ল্যান। কিন্তু গত প্রায় তিন বছর থেকে উদ্যোগটা ধরে রেখে নিজের সংসার চালাচ্ছেন। আমাদের নারীরা কঠিন সময়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, আমরা শুধু রান্নাবান্নাই পারি তা নয়, প্রয়োজনে অর্থনৈতিক হালও ধরতে পারি।
সায়মা শাহিদা ইসলাম নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে গড়ে তোলেছেন ইনসিয়া নামে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তিনি বলেন, নারীদের মেধা, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা অনেক বেশি। কিন্তু সুযোগের অভাবে তাদের মেধার বিকাশ হচ্ছে না। পুরুষ যদি কোটি টাকার ব্যবসা করতে পারেন, তাহলে নারীও পারবেন। নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের এই নারীদের উন্নয়নের জন্য কিছু প্রস্তাবনা আমার আছে। প্রথমেই হলো তাদের সবাইকে স্কিল ডেভেলপমেন্টের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ফ্রি ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেটা যেন হয় উন্নতমানের প্রশিক্ষণ। দ্বিতীয়ত, এসব নারী উদ্যোক্তাকে প্রথমেই ঋণ কিংবা প্রণোদনা প্যাকেজ নয়, তাদের জন্য ছোট ছোট এককালীন অনুদান দিতে হবে। যেটার মাধ্যমে তারা ছোট আকারে তাদের উদ্যোগকে কাজে লাগাতে পারবে এবং সেটিকে মনিটরিং ও মেন্টরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং পাশাপাশি তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ভেতর নিয়ে আসতে হবে। যাতে করে ফেসবুকের কোনো সমস্যা হলেও যেন আমাদের নারীদের উদ্যোগটি বন্ধ না হয়ে যায়।