ফিলিস্তিনি মুসলমানরা যেন দুনিয়ায় এসে অপরাধ করে বসেছেন! সারাবছর ইসরাইলি কামানের গোলার শঙ্কায় দিন পার হয় তাদের। কখন বুলেট এসে বুকটা ঝাঁঝড়া করে দেবে সেই আশঙ্কায় রাতে ঘুমোতে যান নিপীড়িত ফিলিস্তিনিরা। ভোরের সূর্যটা দেখার সেৌভাগ্য হবে কিনা সেটি নিয়ে রাতে ঠিকমত ঘুমও হয় না।
যুগ যুগ ধরে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিরা ঈদের দিনেও ইসরাইলের বর্বর হামলা থেকে রেহাই পায়নি। বৃহস্পতিবার ছিল ফিলিস্তিনে ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে পরিবার পরিজন নিয়ে একটু শান্তিতে থাকতে চেয়েছিল ফিলিস্তিনিরা। সেটি আর হয়ে উঠল কই। নিপীড়ক ইসরাইল তো আর হামলা বন্ধ করবে না। এতদিন বিমান হামলা চালালেও ঈদের দিন তার গতি বাড়িয়েছে। স্থল হামলাও শুরু করেছে। গাজার বিভিন্ন স্থানে সেনা ও ট্যাংক মোতায়েন করে রেখেছে। এসব হামলায় অন্তত ৫৮০ জন নিরপরাধ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গাজার বাসিন্দারা ঈদুল ফিতর উদযাপন করলেও রক্ষা পায়নি ইসরাইলি বিমান হামলা থেকে। ইসরায়েলের চালানো এই আগ্রাসনের প্রভাব নিজ দেশেও পড়তে শুরু করেছে। দেশটির বিভিন্ন শহরে আরব ও ইহুদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয়েছে দাঙ্গা। দীর্ঘ দিন ধরে চলা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের নতুন রুপ হিসেবে দেখা হচ্ছে ইসরায়েইর এই অভ্যন্তরীণ দাঙ্গা।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলার পর স্থল আক্রমণ শুরু করেছে ইসরাইল। দেশটির বিমান ও স্থল বাহিনী বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ফিলিস্তিনিদের ওপর এই আক্রমণ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের ‘অপারেশন গার্ডিয়ানস অব দ্য ওয়াল’ নামের এই সশস্ত্র অভিযানে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সাত শতাধিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় ড্রোনও ব্যবহার করছে ইসরাইল।
ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, গত চারদিনে ফিলিস্তিনে যত হামলা চালানো হয়েছে তার ৯৫ শতাংশই ছিল আকাশপথে। এতে হামাসের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে কয়েক বছর লেগে যাবে বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
মিশরীয় মধ্যস্ততাকারীরা দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলেও অব্যাহত রয়েছে সংঘাত। গত চার দিন ধরে ইসরায়েলের জোরালো বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ১১৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সীমান্তের কাছে ইসরাইলের দুটি পদাতিক ইউনিট এবং একটি সাঁজোয়া ইউনিট অবস্থান করছে। এছাড়া আরও সাত হাজার সেনা রিজার্ভ রাখতে বলা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানৎজ তাদের সেনাবাহিনীকে শক্তি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। যেকোনো সময় স্থল হামলা শুরু হতে পারে।